ডিজিটাল যুগে মুসলমানের দায়িত্ব ও করণীয়: এক বিস্তৃত আর্টিকেল
আমাদের জীবন যেন আজ ডিজিটাল এক বিশাল নাটকের মঞ্চ, যেখানে সবাইই অভিনয় করছেন ‘ডিজিটাল সেবক’ চরিত্রে! অফিস হোক বা বাড়ি, রাস্তাঘাট কিংবা সোশ্যাল মিডিয়া—সব জায়গাতেই আমাদের হাতেগোনা কয়েক জন নয়, বরং প্রায় সবাই হয়ে গেছেন একরকম প্রযুক্তির ‘সুপারম্যান’। কিন্তু এই ‘সুপারম্যান’ হওয়া মোটেও সহজ নয়, কারণ আমাদের হাতে কোনো ক্যাপ কোট নেই, শুধু হাতে মোবাইল আর মাথায় হাজারো পিক্সেল-ল্যাগ!
শুরু করি অফিসের গল্প দিয়ে। অফিসে বসে একটা কাজের চাহিদা নেই, বরং অফিসের সবাই বলে, “ওই তো, তুমি তো আমাদের ডিজিটাল সেবক!” মানে, ল্যাপটপ হ্যাং হলে ফোন আসে, প্রিন্টার কাজ না করলে আবার ফোন আসে, আরেকটু ধৈর্য্য ধরলেই হয়তো অফিসের কোলিগ বলবে, “স্যার, আপনি তো আইটি এক্সপার্ট!” অথচ আসল কথা হলো, গুগল সার্চ আর ইউটিউব ভিডিও দেখেই সবকিছু বুঝে নেওয়া! সত্যিই, ‘গুগল ম্যাজিশিয়ান’ আর ‘ইউটিউব টিউটোরিয়াল মাস্টার’ ছাড়া আর কেউ এ কাজ করতে পারে না।
বাড়ি ফিরলেই নতুন পর্ব শুরু। মা বলেন, “এই ফোনটা কেমন করে চালাব?” বাবা জিজ্ঞেস করেন, “ফেসবুকে ছবি আপলোড কই করব?” ছোট বোন বলছে, “আমার ক্লাসের জুম কিভাবে করব?” আর আপনি? আপনি হচ্ছেন পরিবারের একক ‘টেকনো সাপোর্ট সেন্টার’। এই সাপোর্ট সেন্টার চালানো এমন এক ধরনের কাজ, যেখানে আপনাকে এক সাথে ১০ জনের প্রযুক্তি সমস্যা সমাধান করতে হয়—আর মাঝে মাঝে ফোনটা হ্যাং হয়ে যায়, তখন আপনাকে আবার মাথা ঠান্ডা করে ফোন চালু করতে হয়!
সোশ্যাল মিডিয়ার কথা না বললেই নয়। ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম—সব জায়গায় আপনি হচ্ছেন ‘কমেন্ট মডারেটর’, ‘মেসেজ রিসপন্ডার’ আর কখনো ‘ডিজিটাল কনফ্লিক্ট ম্যানেজার’। কেউ পোস্টে ভুল তথ্য দিলে তাকে ‘নরমলি’ বুঝিয়ে দিতে হয়, আবার কেউ কারো সঙ্গে ঝগড়া করলে শান্ত করতেও হয়। এসব করতে করতে হয়তো আপনি হয়ে উঠেছেন ‘অনলাইন পুলিশ’। তবে অবশ্যই ‘স্নায়ু মজবুতকারী’ একটা বিশেষ গুণ থাকলেই এসব সম্ভব!
আর তো বলছি না, এই ‘ডিজিটাল সেবক’ হওয়ার সেরা পরীক্ষা হচ্ছে—‘নেটওয়ার্ক স্লোডাউন’। ৫ এমবিপিএস নেটওয়ার্ক থেকে ৫ কিলোবাইটে নেমে আসা, আর ওয়াই-ফাই পাসওয়ার্ড ভুলে যাওয়া—এসব ক্ষেত্রে আমাদের সবার একরকম অভিজ্ঞতা আছে। মনে হয়, যেন জীবনের সব আশা ও স্বপ্ন এক মুহূর্তে ‘রিফ্রেশ’ বাটনের নিচে চাপা পড়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমরা আবার উঠে দাঁড়াই, কারণ আমরা ডিজিটাল সেবক, হেরে যাওয়াটা আমাদের কাছে মানায় না।
তবে শুধু এইসব হাস্যরস আর জটিলতা নয়, ডিজিটাল সেবক হওয়া মানে এক ধরনের দায়িত্ব। সঠিক তথ্য ছড়ানো, ডিজিটাল নিরাপত্তা বজায় রাখা, আর প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা—এই দায়িত্ব গুলোও আমাদের কাঁধে। ভুয়া খবর থেকে সজাগ থাকা আর নিজের ডিজিটাল পরিচয় রক্ষা করাটাও হয়তো আমাদের ‘ডিজিটাল যোদ্ধা’ হওয়ার একটি বিশেষ দিক।
এই দুনিয়ার ‘ডিজিটাল সেবক’রা, আমরা ছোট-বড় সবাই, নিজেদের মতো করে প্রযুক্তিকে ব্যবহার করি। কেউ হয়তো অফিসের আইটি স্পেশালিস্ট, কেউ হয়তো বাচ্চাদের ‘জুম ক্লাসের মাস্টার’, আবার কেউ সামাজিক যোগাযোগের ‘নেটওয়ার্ক ম্যানেজার’। আমরা সবাই একসাথে প্রযুক্তির এক বিশাল পরিবারের সদস্য, যারা হাসি-কান্না, কাজ-অবসর, ঝগড়া-সমাধান সব মিলে এক আলাদা সংস্কৃতি গড়ছি।
তাই বন্ধুরা, পরবর্তীবার যখন কারো কম্পিউটার হঠাৎ হ্যাং করবে, মোবাইল চার্জার খুঁজে না পাবে, বা নেটওয়ার্ক স্লো হয়ে যাবে, তখন একটু ধৈর্য ধরুন। হয়তো আপনার কাছেই আসছে সেই ডিজিটাল সেবক, যিনি হাসিমুখে আপনার সমস্যার সমাধান করবেন, আর ফিরবেন নতুন কোন ‘টেকনিক্যাল মিশনে’।
আমাদের জীবন যেমন দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে, তেমনই আমাদের ডিজিটাল সেবক হওয়ার ভূমিকা হচ্ছে দিনের পর দিন আরও বড় ও গুরুত্বপূর্ণ। আমরা হয়তো কখনোই “হিরো” বলেও ডাক পাব না, কিন্তু আমাদের কাজ তো হচ্ছে সবার জীবনে প্রযুক্তির আলো ছড়িয়ে দেয়া—একটু হাসি, একটু সাহায্য আর অনেকটুকু ভালোবাসা নিয়ে।
শেষমেষ বলতে চাই, আমরা ডিজিটাল সেবক, তাই গর্ব করবো আমাদের ছোট ছোট বিজয় আর হাসির জন্য। আর থাকুক প্রযুক্তির এই মায়াজালে আমাদের সেবা, যেটা শুধু কাজ নয়, বরং জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ।