Dawatul Islam | বড় হুজুর সমাচার- পর্ব-৪

বৃহস্পতিবার, ০৯, অক্টোবর, ২০২৫ , ২৩ আশ্বিন ১৪৩২

আপনার দাওয়াহের বার্তাকে পৌঁছে দিন বিশ্বময়
একটি প্রফেশনাল ও আধুনিক ইসলামী ওয়েবসাইটের মাধ্যমে
বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন
ইসলামী শিক্ষার সাথে থাকুন
ইসলামিক বক্তা, খতিব, শিক্ষক...গণের জন্য ওয়েবসাইট
এখানে ক্লিক করুন
সমাজসেবা কার্যক্রমে অংশ নিন
আপনার কষ্টার্জিত বয়ান আজীবন ধরে রাখুন
আরও জানুন
বড় হুজুর সমাচার- পর্ব-৪
২৬ জুন ২০২৩ ১১:৩০ মিনিট

মুফতি ফুলানের তৎপরতা-১

মুফতি ফুলান সাহেব বেশ নামকরা মুফতি । এলাকার লোক হওয়ায় সবাই তাকে বেশ সমিহ করে চলে। আম-জনতা আবেগের কাছে বড় বেশী দুর্বল। হঠাৎ একটা কিছু করার ইচ্ছোমাথাচাড়া দিয়ে ওঠে অমনি শুরু করে দেয়। হয়তো কিছু টের পাবার আগেই কিছু একটা করা হয়ে যায়, ভয়ানক শক্তি পাবলিককে দিয়ে কাজটা করিয়ে নেয়, বিবেক বাধা দিতে চায় কিন্তু হয়না। একেবারে শেষে এসে, যতক্ষণে ব্যাপারটা ঘটে গেছে। আক্ষেপ ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না।

মুফতি ফুলান সাহেব স্বীয় পরিবার পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকার প্রবল আগ্রহ নিয়ে এসেছেন। কিন্তু ধর্মীয় কাজে কেউ তাকে পাত্তা দিচ্ছে না। বলে রাখা ভালো যে, ফুলান সাহেব দীর্ঘদিন এলাকার বাইরে থেকে নামমাত্র পড়ালেখা করে এসেছেন। প্রচণ্ড আবেগের বশবর্তী হয়ে এবং ফুলান সাহেবের পিতৃ পরিচয়ে কোনরকম একটা কর্মসংস্থান জুটেছে বটে, কিন্তু সেখানে তেমন সুবিধা করতে পারছেন না। কারণ কমিটির বাউন্ডারি পাড় হয়ে বেশি দূর এগুতে পারেন না তিনি। শুধু ফিকির করেন ক্যামনে কি করা যায়।

খোদাতা’লার ওপর প্রগাঢ় ভরসা। দিন যায় অন্য এক রঙিন কল্পনায়। কিন্তু ক্ষুধার্ত চোখ বৈরীভাবাপন্ন ব্যক্তিসুখ-উদাসীন দুনিয়ার পানে চেয়ে-চেয়ে আরো ক্ষয়ে আসে। খোদার এলেমে বুক ভরে না তলায় পেট শূন্য বলে। মসজিদের বাঁধানো পাথরের খণ্ডটার ওপর বসে শীতল পানিতে অজু বানায়, টুপিটা খুলে তার গহ্বরে ফুঁ দিয়ে ঠাণ্ডা করে আবার পরে। কিন্তু শান্তি পায় না। মন থেকে-থেকে আচমকা মোচড় দিয়ে ওঠে মুফতি ফুলানের।

একদিন অপরাহ্নের দিকে লোকটি চীৎকার করে ওয়াজ করে লোকদের। কিন্তু লজ্জায় তাদের মাথা হেঁট। সদ্য ফারেগ হওয়া লোকটির চোখে নুরানী আগুন। –আপনারা বেএলেম, জাহেল আপনাদের জীবন মরে গেছে। মজমায় বৃদ্ধ হালিমের বাপও ছিল। হাঁপানির রোগী, সে দম খিঁচে লজ্জায় নত করে রাখে চোখ। তার এলাকার মানুষরা অশিক্ষিত বর্বর। তাদের মধ্যে কিঞ্চিৎ খোদার আলো ছড়াবার জন্যেই নাকি ফুলান সাহেবের আগমন। তারা বর্বর হলে কী হবে, দিল তাদের সাচ্চা, খাঁটি সোনার মতো। খোদা-রসুলের ডাক একবার দিলে পৌঁছে দিতে পারলে তারা বেচাইন হয়ে যায়। তাছাড়া তাদের খাতির-যত্ন ও স্নেহ-মমতার মধ্যেই বাকি দিনগুলো খতম করতে চান তিনি।

এ বাড়ি সে বাড়ি থেকে লোকেরা আসতে লাগল। তাদের মৰ্মদ্ভদ কান্না, অশ্রুসজল কৃতজ্ঞতা, আশার কথা, ব্যর্থতার কথা ব্যক্ত হতে লাগল দিনের পর দিন। তার সঙ্গে টাকা পয়সা, লুঙ্গি, জুব্বার কাপড়, নানান কিসিমের দেশি বিদেশি হাদিয়ার ছড়াছড়ি যেতে লাগল।

ক্ৰমে ক্ৰমে ফুলানের পৈত্রিক ঘরবাড়িরও উন্নতি সাধিত হতে লাগলো। জীবন পদে পদে এগিয়ে চলল। আর সে জীবনের সার্থকতা কিছুটা আন্দাজে আসতে শুরু হলো। কিন্তু এর পরিণাম কি হবে সে-কথা ভেবে দেখার লোক সে নয়। বাৎসরিক ৩/৪টা পার্বনে বড় রকমের হাদিয়া আসে ঘরে, তাই যথেষ্ট। এ বিষয়গুলো কখনো সে যে ভাবিত না তা নয়। কিন্তু তারও যে বঁচবার অধিকার আছে সেই কথাটাই সে সাময়িক চিন্তার মধ্যে প্ৰধান হয়ে ওঠে। তাছাড়া ছোটবেলার শ্রমক্লান্ত হাড় বোবকরা দিনের কথা স্মরণ হলে সে শিউরে ওঠে। ভাবে, খোদাব বান্দা সে নির্বোধ ও জীবনের জন্যে অন্ধ। তার ভুলভ্রান্তি তিনি মাফ কবে দেবেন। তাঁর করুণা অপার, সীমাহীন। এসব কথা ভাবতে ভাবতে মনে পড়ে যায় ছোটবেলা সংসারের অভাব অনটনের কষ্টের কথা।

অভাবে পড়তেই পারে মানুষ, কিন্তু অভাব থেকে ঘুরে দাঁড়াতে কারো করুণায় নিজেকে অভ্যস্ত না করে যেকোনো রকম কাজ করে খাওয়ার নামই দারুণ বেঁচে থাকা, ভালো থাকার মানে মূলত এখানেই। তাহলে অভাবে কেন স্বভাব নষ্ট হবে? বরং আলস্যের স্বভাব ও তথাকথিত সামাজিক আত্মসম্মানের স্বভাব নিজের মধ্যে জিইয়ে রাখার মাধ্যমে ও পরনির্ভরশীলতার কারণেই মানুষ নষ্ট হয়।

মুফতি ফুলান ছোটবেলার অভাবের কষ্টের কথা আজও ভুলেনি। তাই একটু স্বাচ্ছন্দে দিন যাপন করার জন্য পাগলপারা হয়ে যায়। কিন্তু স্বভাবকে অভাবে নষ্ট হতে দেয়া যাবে না। বরং অভাব অনটনকে পুঁজি করে আত্মিক শক্তি বহুগুণে বৃদ্ধি করতে হবে। এ প্রসঙ্গে কাজী নজরুলের কবিতাটি তাঁর জন্য প্রযোজ্য-

হে দারিদ্র্য, তুমি মোরে করেছ মহান্‌।

তুমি মোরে দানিয়াছ খ্রীষ্টের সম্মান

কন্টক-মুকুট শোভা।-দিয়াছ, তাপস,

অসঙ্কোচ প্রকাশের দুরন্ত সাহস;

উদ্ধত ....................

মোঃ ওয়াহিদুজ্জামান গালিব, অধ্যাপক ও গবেষক

সব সংবাদ