Dawatul Islam | ওহীভিত্তিক আন্দোলন: নেতৃত্ব ঈমানদারের মৌলিক অধিকার

বৃহস্পতিবার, ০৯, অক্টোবর, ২০২৫ , ২৩ আশ্বিন ১৪৩২

আপনার দাওয়াহের বার্তাকে পৌঁছে দিন বিশ্বময়
একটি প্রফেশনাল ও আধুনিক ইসলামী ওয়েবসাইটের মাধ্যমে
বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন
ইসলামী শিক্ষার সাথে থাকুন
ইসলামিক বক্তা, খতিব, শিক্ষক...গণের জন্য ওয়েবসাইট
এখানে ক্লিক করুন
সমাজসেবা কার্যক্রমে অংশ নিন
আপনার কষ্টার্জিত বয়ান আজীবন ধরে রাখুন
আরও জানুন
ওহীভিত্তিক আন্দোলন: নেতৃত্ব ঈমানদারের মৌলিক অধিকার
২৭ মে ২০২৩ ০৯:০০ মিনিট

দুনিয়ার বুকে ক্ষমতার রদবদলে ঐশ্বরিক বিধানের চাহিদা কি? এ চাহিদানুযায়ী জাগতিক জীবনে আল্লাহ পাকের নেক বান্দাদের অবস্থান কোথায়? এ আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন- وَ لَقَدۡ کَتَبۡنَا فِی الزَّبُوۡرِ مِنۡۢ بَعۡدِ الذِّکۡرِ اَنَّ الۡاَرۡضَ یَرِثُهَا عِبَادِیَ الصّٰلِحُوۡنَ আমি উপদেশের পর যবুরে লিখে দিয়েছি যে, আমার নেক বান্দারা অবশেষে পৃথিবীর অধিকারী হবে। (আম্বিয়া- ১০৫)

অত্র আয়াতের মূল বক্তব্য হচ্ছে, আল্লাহ তায়ালাই বিধানুযায়ী পৃথিবীর মালিকানা ও কর্তৃত্ব অবশেষে তার সৎ ও আদর্শবান বান্দাদের হাতেই ফিরিয়ে দেবেন। এখন কথা হচ্ছে, মালিকানা বলতে কি বুঝায় এবং সৎ বান্দা বলতে কাদেরকে বুঝানো হয়েছে।

আল্লাহ তায়ালা হযরত আদম (আ:) কে প্রতিনিধিরূপে দুনিয়ায় প্রেরণ করেছেন একে আবাদ, সংস্কার, উন্নতি সাধন এবং এর মাঝে লুকায়িত নানা প্রাকৃতিক সম্পদ ও শক্তিকে কাজে লাগানোর জন্যে। জমিনের প্রকাশ্য ও গোপন সব ধরনের সম্পদকে ব্যবহার করে উন্নতির চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছিয়ে দেয়ার জন্যে।

দুনিয়ায় মানুষ কিভাবে জীবন যাপন করবে এবং কিভাবে লেনদেন করবে সে বিষয়ে পূর্ণাংগ ও বিস্তারিত নিয়ম নীতি ও আইন কানুন তাকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। আর এ নিয়মনীতি ও আইন কানুনের ভিত্তি হচ্ছে তাওহিদ (ঈমাণ) ও সৎ কাজ। এর বিস্তারিত বিবরণ সর্বশেষ আসমানী কিতাবে বর্ণনা করা হয়েছে। এ বিধানের প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এগুলো মানবজাতীকে সৎ পথে পরিচালিত করে এবং তাকে সাবধানী হতে অনুপ্রাণিত করে। শুধু তাই নয়, বরং তার চলাফেরা ও আচার আচরণের মাঝে একট সামঞ্জস্য ও ভারসাম্যের নিশ্চয়তাও বিধান করে।

প্রভুর এ বিধানুযায়ী কেবল পৃথিবীর উন্নতিই একমাত্র উদ্দেশ্য নয়। পৃথিবীর সম্পদ আহরণ ও এর ব্যবহারই মুখ্য উদ্দেশ্য নয়। বরং এর সাথে সাথে তাকে আরো একটি মহান উদ্দেশ্য সাধন করতে হবে, আর তা হলো, তার আত্মর উন্নতি এবং পার্থিব জগতে তার মানবীয় গুণাবলীর চরম বিকাশ। ফলে সে এ বস্তুতান্ত্রিক রঙীন সভ্যতার মাঝে বিলীন হয়ে গিয়ে পশুত্বের পর্যায়ে নেমে যাবে না এবং পৃথিবীর তাবৎ প্রাকৃতিক ও গোপন সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহারের পরও মানবীয় গুণাবলীর উচ্চ শিখর থেকে তার পতন ঘটবে না।

আর এ গুরু দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কখনও পৃথিবীর ওপর আধিপত্য ঘটবে স্বৈরাচারী, অত্যাচারী ও যুলুমবাজদে, কখনও আধিপত্র ঘটবে র্ববর, হিংস্র ও আগ্রাসনবাদীদের, আবার কখনও ঘটবে আল্লাহদ্রোহী ও ভোগবাদী লোকদের যারা পৃথিবীর সম্পদ ও শক্তির কেবল বস্তুতান্ত্রিক ব্যবহারেই পারদর্শী। তবে এসব ঘটবে ও ঘটতে থাকবে চলার পথের নিছক বিচ্ছিন্ন অভিজ্ঞতা হিসেবে। অবশেষে এ পৃথিবীর মালিকানা আল্লাহর নেক বান্দাদের হাতেই ন্যস্ত হবে। কারণ, তাদরে প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে যে, তারা ঈমান ও সৎ কাজকে অভিন্নরূপে দেখে থাকে। তাদের জীবনের কোনো পর্যায়েই এ দুটো জিনিসের মাঝে পার্থক্য ও ব্যবধান সৃষ্টি হয় না।

তাওহিদের (ঈমান) গভীরতা ও কর্মের স্পৃহার গুণ যে জাতির মাঝে যতো বেশি ঘটবে ততোই সে জাতি পৃথিবীর উত্তরাধিকার মালিকানা লাভের উপযুক্ত বলে বিবেচিত হবে। ইতিহাসের বিভিন্ন স্তরে এর অগণিত উপমা রয়েছে। কিন্তু যখনই এ গুণ দুটোর অবর্তমান দেখা দেবে, তখনই অপর পক্ষের পাল্লা ভারী হবে। কখনও বস্তুগত উপায় উপকরণ গ্রহণকারীদের পাল্লা ভারী হয় বিশেষ করে যখন ঈমানের দাবীোররা এসব উপায় উপকরণ গ্রহণে উদাসীন হয়ে পড়ে। অর্থাৎ খেলাফতের সঠিক দায়িত্ব পালনের স্পৃহা হারিয়ে ফেলে।

ঈমানের দাবী পূরণ করাই হচ্ছে মুমিনের একমাত্র দায়িত্ব ও কর্তব্য। আর এ ঈমানের দাবী হচ্ছে, সৎ কাজ করা এবং খেলাফতের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করা। আর তখনই আল্লাহ তায়ালার অঙ্গিকার বাস্তবায়িত হবে। তখন নিয়মানুযায়ী নেক বান্দারাই পৃথিবীর মালিকানা লাভ করতে সক্ষম হবে। কারণ হচ্ছে- নেক বান্দারা কেবল ঈমানেরই অধিকারী নয়, তারা কর্মস্পৃহারও অধিকারী।

মানবতা যখন চিন্তা চেতনায় পরিপক্কতা লাভ করে তখনই এ আদর্শ নিয়ে বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আগমন ঘটে। খোলা চিঠির ন্যায় বিশ্ব দরবারে নবীর আদর্শকে তুলে ধরা হয়, যা স্বচ্ছ, সুস্পষ্ট ও পূর্ণাঙ্গ। মানব জীবনের সকল দিক নিদের্শনাই এতে রয়েছে, যা অপরিবর্তনীয়। কিন্তু কালের দাবী মেটানোর জন্যে তা যথাযথ ও ক্ষমতাসম্পন্ন। কেননা অনাগত ভবিষ্যতের যুগ চাহিদার বিষয়টি একমাত্র আল্লাহ পাকই ভালো জানেন। কারণ, তিনি সূক্ষ্মদর্শী ও সর্বজ্ঞানী, সকল সৃষ্টি জগতই তাঁর জ্ঞানের আওতাধীন।

মহান এ গ্রন্থটিতে চির পরিবর্তনশীল মানব জীবনের জন্যে কিছু স্থায়ী ও সুনির্দিষ্ট মূলনীতি প্রবর্তন করা হয়েছে। তবে ছোটখাট বিষয়গুলোর ব্যাপারে সিন্ধান্ত গ্রহণের অধিকার দেয়া হয়েছে। যুগ ও জীবনের চাহিদার প্রেক্ষিতে নতুন নতুন আইন ও পন্থা উদ্ভাবন করতে পারবে। লক্ষণীয় বিষয় হলো- সে নীতি ও পন্থা যেন স্থায়ী ও সুনির্দিষ্ট মূলনীতির সাথে সাংঘর্ষিক না হয়।

তাছাড়া মানুষের বিবেক বুদ্ধিকেও স্বাধীনভাবে কাজ ও চিন্তা করার সুযোগ দেয়া হয়েছে। যাকে বলা হয় মুক্তচিন্তা। এ মুক্তচিন্তার পথ সুগম করার জন্যে অনুকূল সমাজ ব্যবস্থারও প্রবর্তন করা হয়েছে। তবে এ মুক্তচিন্তার একটা নির্দিষ্ট সীমারেখা থাকতে হবে। মানুষ অবশ্যই স্বাধীন ও অবাধে তার চিন্তাকে কাজে লাগাবে, তবে তা মানুষের কল্যাণ, উন্নতি সাধনের জন্যে হতে হবে। মোদ্দকথা মানব জীবনের জন্যে নির্ধারিত আল্লাহর বিধান ও মৌলনীতির আওতাধীন হতে হবে।

যে সময়টিতে শ্রেণি বৈষম্য, বিচার বৈষম্য, দাস ও সামন্ত প্রথা প্রচলিত ছিল, ঠিক সেসময়ে “আইনের চোখে সবাই সমান” এ ঘোষণা ইসলামই দিয়েছিল। ইসলামের এ ঘোষণা তৎকালীন মানুষের কাছে ছিল বড়ই বে-মানান। পরবর্তীতে ওই মানুষগুলোই ধীরে ধীরে ইসলামের এ সার্বজনীন নীতিকে উপলব্ধি করতে প্রয়াস পায়। বিধানটির বাস্তবায়ন দেড় হাজার বছর পূর্বে ইসলাম করে গোটা দুনিয়াকে দেখিয়েছে।

হযরত রাসুলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিশ্ববাসীর জন্যে আর্শিবাদ হিসেবে গণ্য, এ কথা নুবওয়াতে বিশ্বাসী কিংবা অবিশ্বাসী সবাই মানে। তাঁর এ আদর্শকে ধারণ করে উত্তপ্ত জগতে বাস করেও স্বর্গীয় সুখ অনুভব করা যেতে পারে।

বর্তমানে মানুষ দিকশূন্য ও দিশেহারা হয়ে পড়েছে। বস্তুতান্ত্রিকতা, যুদ্ধ-বিগ্রহ ও নিষ্ঠুরতার শিকার হয়ে মানুষ দিক-বিদিক ছুটছে। এমতাবস্থায় সমাজ ও রাষ্ট্রে বিশ্বনবীর মহান আদর্শ বাস্তবায়নে জীবন, সম্পদ ও সময় ব্যয় করা সময়ের সবচেয়ে বড় চাহিদা।

সব সংবাদ