ডিজিটাল যুগে মুসলমানের দায়িত্ব ও করণীয়: এক বিস্তৃত আর্টিকেল
মুসলমানের উপর মদ সম্পূর্ণরূপে হারাম হওয়ার প্রতিক্রিয়া লক্ষণীয়। একে ইসলামের মু’যেজা বা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লামের শিক্ষার বৈশিষ্ট্য। অপরদিকে ইসলামি রাজনীতির অপরিহার্য ফলাফল ও বলা যেতে পারে।
নেশার অভ্যাস পরিহার করা অত্যন্ত কঠিন ও জটিল কাজ বটে। আর আরববাসী হলে তো বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, তারা মদ ব্যতিত এক মুহুর্তও থাকতে পারে না। এহেন পরিস্থিতিতে কি এমন পরশপাথরের সংস্পর্শ পেলো যে, একটিমাত্র ঘোষণা শোনামাত্র তাদের স্বভাবে আমুল পরিবর্তন সাধিত হলো। একটিমাত্র ঘোষণাই তাদের জীবনে এমন পরিবর্তন সৃষ্টি করেছিল যে, কিছুক্ষণ পূর্বে যে দ্রব্যদটি তোদের কাছে অতি প্রিয় ও লোভনীয় ছিল- যা অল্প কিছুক্ষণ পর অসম্ভব ঘৃণিত বস্তুতে রূপান্তরিত হলো।
অপরদিকে দেড় হাজার পছর পর আধুনিক যুগের তথাকথিত সর্বোচ্চ উন্নত রাজনীতির একটি উপমা লক্ষ্য করা যাক।
যুক্তরাষ্ট্রে সংবিধানের ১৮ তম সংশোধনীর মাধ্যমে মদ তৈরি, বিপনন, আমদানি এবং পরিবহন পুরোপুরি নিষিদ্ধ ছিল । যুক্তরাষ্ট্রে এই সময়কাল 'প্রহিবিশন যুগ' বলে বর্ণনা করা হয়। আইনটি ১৯২০ হতে ১৯৩৩ সাল পর্যন্ত বলবৎ ছিল।
অভিজ্ঞ ডাক্তার ও সংস্কারকগণ নেশাদ্রব্য গ্রহণের মারাত্মক ক্ষতিকর দিকগুলো উপলব্দি করে মাদক দ্রব্যগুলো বন্ধ করার উদ্যোগ নিয়েছিল। এ কারনে জনমত গঠনের যত মাধ্যম সবগুলোই ব্যবহার করেছিল। সংবাদ মাধ্যম, লিফলেট, পোস্টার, অসংখ্য বইসহ নানাভাবে মাদকের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিল। এমনকি সেদেশের সংসদে মাদকের বিরুদ্ধে আইন পাশ হয়েছিল।
কিন্তু এতোকিছুর পরও তৎকালীন আমেরিকার যে অবস্থা সেদেশের মানুষ, সরকার ও পুরো পৃথিবীর সামনে উঠে এসেছে তাহলো- তথাকথিত উন্নত আধুনিক ও শিক্ষিত জাতি আইনগত নিষেধাজ্ঞার সময়টিতে পূর্বের সময়ের চাইতেও অধিক মাত্রায় মাদকদ্রব্য গ্রহণ করেছি। এমতাবস্থায় সেদেশের সরকার এ আইন রহিত করতে বাধ্য হয়।
কিন্তু যে উদ্দেশ্যে সরকার এই কাজ করেছিল, কার্যত তার উল্টো ফল হয়েছিল। নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ার পর অ্যালকোহলের উৎপাদন, বিপনন, বিক্রি পুরোটাই চলে যায় অপরাধী চক্রের হাতে, আর সরকার বঞ্চিত হয় বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে।
অন্ধকার যুগের আরব মুসলমান এবং উন্নত, আধুনিক ও শিক্ষিত জাতি আমেরিকার মধ্যকার তফাৎটি অত্যন্ত পরিষ্কার। বিষয়টি কারও অস্বিকার করার কোন উপায় থাকে না। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এ বিরাট পার্থক্যের মূল রহস্য কি?
এখানে লক্ষণীয় বিয়ষ এই যে, ইসলাম মানুষের চরিত্র সংশোধনের জন্য শুধু আইন প্রয়োগ করাকেই যথেষ্ঠ মরেন করেনি। বরং আইন জারি করার পূর্বে তাদের মন-মষ্তিস্ককে পর্যাপ্ত ট্রেণিং, বন্দেগী, সাধনা ও পরকালীন জীবনের জবাবদিহীতার মাধ্যমে মানব জীবনের মননে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধন করে।
আর এ জন্যেই রাসুলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাম আল্লাহ প্রাপ্ত একটিমাত্র নিদের্শে তাদের স্বীয় জান-মাল, স্বাচ্ছন্দ এবং ভোগ-বিলাসিতা বিসর্জন দিয়েছিল। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লামের মক্কী জীবনে মানুষের মন তৈরির মিশন চলতে চলতে আত্মত্যাগীদের বিশাল একটি দল তৈরি হয়ে যায়। তারপর প্রণয়ন করা হয় আইন।
পক্ষান্তরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের মানসিক অবস্থা পরিবর্তন করার জন্য সরকার, বিভিন্ন সংগঠন ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ অসংখ্য উপায় অবলম্বন করেছে, কোনভাবেই মানুষের মনের অবস্থার পরিবর্তন হলো না। কারণ তাদের কাছে পরকালীন জবাবদিহীতার চিন্তার অনুপস্থিতি ছিলো।