ইসলামী রাষ্ট্র ও বিপ্লবের নৈতিক ভিত্তি: ধারনা, প্রস্তুতি ও ভুল বোঝাবুঝি

নাযিলের সময়কাল
সূরার বক্তব্য বিষয় থেকে একথা পুরোপুরি সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে , এটি মক্কা মু’ আযযমার প্রথম যুগে নাযিল হয়। হাদীস থেকে ও জানা যায় , কিছুদিন অহীর অবতরণ বন্ধ ছিল। এ জন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অত্যন্ত অস্থির হয়ে পড়েছিলেন। বারবার তাঁর মনে এই আশংকার উদয় হচ্ছিল , হয়তো তাঁর এমন কোন ক্রুটি হয়ে গেছে যার ফলে তাঁর রব তাঁর প্রতি নারাজ হয়ে গেছেন এবং তাঁকে পরিত্যাগ করেছেন। এ জন্য তাঁকে সান্ত্বনা দিয়ে বলা হয়েছে , কোন প্রকার অসন্তুষ্টির কারণে অহীর সিলসিলা বন্ধ করা হয়নি।
বরং এর পেছনে সেই একই কারণ সক্রিয় ছিল যা আলোকোজ্জ্বল দিনের পরে রাতের নিস্তব্ধতা এ প্রশান্তি ছেয়ে যাবার মধে সক্রিয় থাকে। অর্থাৎ অহীর প্রখর কিরণ। যদি একনাগাড়ে তাঁর প্রতি বর্ষিত হতো তাহলে তাঁর স্নায়ু তা বরদাশত করতে পারতো না । তাই মাঝখানে বিরতি দেয়া হয়েছে । তাঁকে আরাম ও প্রশান্তি দান করাই এর উদ্দেশ্য । নবুওয়াতের প্রাথমিক যুগে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই অবস্থার মুখোমুখি হন।
সে সময় অহী নাযিলের কষ্ট বরদাশত করার অভ্যাস তাঁর গড়ে ওঠেনি। তাই মাঝে মাঝে ফাঁক দেবার প্রয়োজন ছিল। সূরা মুদদাসসির এর ভূমিকায় আমি একথা সুস্পষ্টভাবে আলোচনা করেছি। আর অহী নাযিলের সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের স্নায়ুর ওপর এর কী গভীর প্রভাব পড়তো তা আমি সূরা মুয্যাম্মিলের ৫ টীকায় বলেছি। পরে তাঁর মধ্যে এই মহাভার বরদাশত করার ক্ষমতা সৃষ্টি হয়ে গেলে আর দীর্ঘ ফাঁক দেবার প্রয়োজন থাকেনি।
বিষয়বস্তু ও মুল বক্তব্য
এর বিষয়বস্তু ও মূল বক্তব্য রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সান্ত্বনা দেয়া আর এই সান্ত্বনা দানের উদ্দেশ্য ছিল অহী নাযিলের সিলসিলা বন্ধ হয়ে যাবার কারণে তাঁর মধ্যে যে পেরেশানী দেখা দিয়েছিল তা দূর করা । প্রথমে আলো ঝলমল দিনের এবং রাতের নীরবতা ও প্রশান্তির কসম খেয়ে তাঁকে এই মর্মে নিশ্চিন্ততা দান করা হয়েছে যে , তার রব তাঁকে মোটেই পরিত্যাগ করেননি এবং তিনি তাঁর প্রতি অসন্তুষ্ট হননি। এরপর তাঁকে সুসংবাদ দান করা হয়েছে যে , ইসলামী দাওয়াতের প্রাথমিক পর্যায়ে তাঁকে যেসব কঠিন সমস্যা ও সংকটের সম্মুখীন হতে হচ্ছে এগুলো মাত্র কয়েকদিনের ব্যাপার।
তাঁর জন্য পরবর্তী প্রত্যেকটি পর্যায় পূর্ববর্তী পর্যায় থেকে উন্নততর হয়ে যেতেই থাকবে এবং কিছুদিনের মধ্যেই মহান আল্লাহ তাঁর ওপর এমনভাবে তাঁর দান বর্ষণ করতে থাকবেন যার ফলে তিনি খুশী হয়ে যাবেন। কুরআনের যেসব সুস্পষ্ট ভবিষ্যদ্বাণী পরবর্তীকালে অক্ষরে অক্ষরে পূর্ণ হয় এটি তার অন্যতম। অথচ যে সময় এ ভবিষ্যদ্বাণী করা হয় তখন যেসব অসহায় সাহায্য – সম্বলহীন ব্যক্তি মক্কায় সমগ্র জাতির জাহেলিয়াতের বিরুদ্ধে সংগ্রামরত ছিল তারা যে কোনদিন এত বড় বিস্ময়কর সাফল্যের মুখ দেখবে এর কোন দূরবর্তী আলামতও কোথাও দেখা যায়নি।
তারপর মহান আল্লাহ তাঁর বন্ধু মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলেন , আমি তোমাকে পরিত্যাগ করেছি এবং তোমার প্রতি অসন্তুষ্ট হয়েছি – এ ধরনের পেরেশানীতে তুমি ভুগছো কেন ? আমি তো তোমার জন্মের দিন থেকেই তোমার প্রতি অবিরাম মেহেরবানী করে আসছি। তুমি এতিম অবস্থায় জন্মলাভ করেছিলে। আমি তোমার প্রতিপালন ও রক্ষাণাবেক্ষণের সর্বোত্তম ব্যবস্থাপনা করেছি।
তুমি অনভিজ্ঞ ছিলে। আমি তোমাকে পথের সন্ধান দিয়েছি। তুমি অর্থ – সম্পদহীন ছিলে। আমি তোমাকে বিত্তশালী করেছি। এসব কথা পরিস্কারভাবে জানিয়ে দিচেছ যে , তুমি শুরু থেকেই আমার প্রিয়পাত্র আছো এবং আমার মেহেরবানী , অনুগ্রহ দান স্থায়ীভাবে তোমার সাথে সংশ্লিষ্ট রয়েছে। এ ক্ষেত্রে সূরা ত্বা- হা’র ৩৭ থেকে ৪২ পর্যন্ত আয়াতগুলোও সামনে রাখতে হবে।
এই আয়াতগুলোতে হযরত মূসাকে ফেরাউনের মতো শক্তিশালী জালেমের বিরুদ্ধে পাঠাবার সময় আল্লাহ তাঁর পেরেশানী দূর করার জন্য তাঁর জন্মের পর থেকে কিভাবে আল্লাহর মেহেরবানী তাঁকে ঘিরে রেখেছিল সে কথা তাঁকে বলেন। এই সংগে তাঁকে একথাও বলেন যে এ অবস্থায় তুমি নিশ্চিত থাকো , এই ভয়াবহ অভিযানে তুমি একাকী থাকবে না বরং আমার মেহেরবানীও তোমার সাথে থাকবে।
সবশেষে মহান আল্লাহ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি যেসব অনুগ্রহ করেছেন তার জবাবে আল্লাহর সৃষ্টির সাথে তাঁর কি ধরনের আচরণ করা উচিত এবং তাঁর নিয়ামতের শুকরিয়া কিভাবে আদায় করতে হবে একথা তাঁকে জানিয়ে দেন।
উচ্চারণ ও অনুবাদঃ
بِسمِ اللَّهِ الرَّحمٰنِ الرَّحيمِ
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।
وَالضُّحىٰ
ওয়াদ দুহা
শপথ পূর্বাহ্নের।
وَالَّيلِ إِذا سَجىٰ
অল্লাইলি ইযা- সাজ্বা
শপথ রাত্রির যখন তা গভীর হয়।
ما وَدَّعَكَ رَبُّكَ وَما قَلىٰ
মা অদ্দা‘আকা রব্বুকা অমা- ক্বলা
আপনার পালনকর্তা আপনাকে ত্যাগ করেনি এবং আপনার প্রতি বিরূপও হননি।
وَلَلءاخِرَةُ خَيرٌ لَكَ مِنَ الأولىٰ
অলাল্ আ-খিরাতু খাইরুল্লাকা মিনাল্ ঊলা
আপনার জন্যে পরকাল ইহকাল অপেক্ষা শ্রেয়।
وَلَسَوفَ يُعطيكَ رَبُّكَ فَتَرضىٰ
অলাসাওফা ইয়ু’ত্বীকা রব্বুকা ফার্তাদ্বোয়া
আপনার পালনকর্তা সত্বরই আপনাকে দান করবেন, অতঃপর আপনি সন্তুষ্ট হবেন।
أَلَم يَجِدكَ يَتيمًا فَـٔاوىٰ
আলাম্ ইয়াজ্বিদ্কা ইয়াতীমান্ ফাআ-ওয়া
তিনি কি আপনাকে এতীমরূপে পাননি? অতঃপর তিনি আশ্রয় দিয়েছেন।
وَوَجَدَكَ ضالًّا فَهَدىٰ
অওয়াজ্বাদাকা দ্বোয়া-ল্লান্ ফাহাদা
তিনি আপনাকে পেয়েছেন পথহারা, অতঃপর পথপ্রদর্শন করেছেন।
وَوَجَدَكَ عائِلًا فَأَغنىٰ
অওয়াজ্বাদাকা ‘আ-য়িলান্ ফাআগ্না
তিনি আপনাকে পেয়েছেন নিঃস্ব, অতঃপর অভাবমুক্ত করেছেন।
فَأَمَّا اليَتيمَ فَلا تَقهَر ফাআম্মাল্ ইয়াতীমা ফালা-তাক্বর্ ্হা
সুতরাং আপনি এতীমের প্রতি কঠোর হবেন না।
وَأَمَّا السّائِلَ فَلا تَنهَر
অআম্মাস্ সা-য়িলা ফালা-তার্ন্হা
সওয়ালকারীকে ধমক দেবেন না।
وَأَمّا بِنِعمَةِ رَبِّكَ فَحَدِّث
অ আম্মা-বিনি’মাতি রব্বিকা ফাহাদ্দিছ্
এবং আপনার পালনকর্তার নেয়ামতের কথা প্রকাশ করুন।