ইসলামী রাষ্ট্র ও বিপ্লবের নৈতিক ভিত্তি: ধারনা, প্রস্তুতি ও ভুল বোঝাবুঝি

সূরা আত-ত্বীন (At-Tin) পবিত্র কুরআন শরীফের ৯৫ তম সূরা। আয়াত সংখ্যা ৮। সূরাটি মক্কায় অবতীর্ণ হয় এবং সূরাটি মাক্কী সূরার অন্তর্ভুক্ত। ত্বীন শব্দের অর্থ হল "ডুমুর" . এই সূরাটিতে আল্লাহ এক বিশেষ পুরুস্কারের কথা বলেছে যা শুধু বিশ্বাসী এবং সৎকর্মকারীরা লাভ করবে। এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান ও সৎকর্মশীল হওয়ার উপর এ সূরাতে গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।
বিষয়বস্তু ও মূল বক্তব্য
সুরাটির বিষয়বস্তু হচ্ছে পুরস্কার ও শাস্তির স্বীকৃতি। এই উদ্দেশ্যে সর্বপ্রথম মহান মর্যাদাশালী নবীগণের আত্মপ্রকাশের স্থানসমূহের কসম খেয়ে বলা হয়েছে , মহান আল্লাহ মানুষকে সর্বোত্তম কাঠামোয় সৃষ্টি করেছেন। এই বাস্তব বিষয়টি কুরআন মজীদের অন্যান্য স্থানে বিভিন্ন পদ্ধতিতে বর্ণনা হয়েছে। যেমন কোথাও বলা হয়েছে : মানুষকে আল্লাহ পৃথিবীতে তাঁর প্রতিনিধি করেছেন এবং ফেরেশতাদেরকে তার সামনে সিজদা করার হুকুম দিয়েছেন । ( আল বাকারাহ ৩০ – ৩৪ , আল আরাফ ১১ , আল আন ’ আম ১৬৫ , আল হিজর ২৪-২৯ , আন নামল ৬২ , সাদ ৭১-৭৩ আয়াত ) কোথাও বলা হয়েছে : মানুষ আল্লাহর এমন একটি আমানতের বাহক হয়েছে যা বহন করার শক্তি পৃথিবী , আকাশ ও পাহাড় কারো ছিল না। ( আল আহযাব ৭২ আয়াত ) আবার কোথাও বলা হয়েছে : আমি বনী আদমকে মর্যাদাশালী করেছি এবং নিজের বহু সৃষ্টির ওপর তাকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি। (বনী ইসরাঈল ৭০ আয়াত ) কিন্তু এখানে বিশেষ করে নবীগণের আত্মপ্রকাশের স্থানগুলোর কসম খেয়ে বলা হয়েছে , মানুষকে সর্বোত্তম কাঠামোয় সৃষ্টি করা হয়েছে । এর অর্থ এই দাঁড়ায় , মানুষকে এমন উত্তম কাঠামোয় সৃষ্টি করা হয়েছে যার ফরে তার মধ্যে নবুওয়াতের মত সর্বাধিক উন্নত পদমর্যাদা সম্পন্ন লোক জন্ম নিয়েছে। আর এই নবুওয়াতের চাইতে উঁচু পদমর্যাদা আল্লাহর অন্য কোন সৃষ্টি লাভ করেনি।
এরপর বলা হয়েছে , দুনিয়ায় দুই ধরনের মানুষ পাওয়া যায়। এক ধরনের মানুষ এই সর্বোত্তম কাঠামোয় সৃষ্টি হবার পর দুষ্কৃতির দিকে ঝুঁকে পড়ে এবং নৈতিক অধপতনের মধ্যে তলিয়ে যেতে যেতে একেবারে সর্বনিম্ন গভীরতায় পৌঁছে যায়। সেখানে তাদের চাইতে নীচে আর পৌঁছতে পারে না। দ্বিতীয় ধরনের মানুষ ঈমান ও সৎকাজের পথ অবলম্বন করে এই পতন থেকে রক্ষা পায়। তাদেরকে সর্বোত্তম কাঠামোয় সৃষ্টি করার অপরিহার্য দাবী যে উন্নত স্থানে সে স্থানেই তারা প্রতিষ্ঠিত থাকে। মানব জাতির মধ্যে এই দুই ধরনের লোকের অস্তিত্ব এমন একটি বাস্তব সত্য যাকে কোনক্রমেই অস্বীকার করা যেতে পারে না। কারণ মানুষের সমাজে সব জায়গায় সবসময় এটি দেখা যাচ্ছে।
সবশেষে এই বাস্তব সত্যটির মাধ্যমে প্রমাণ পেশ করা হয়েছে। বলা হয়েছে , মানুষের মধ্যে যখন এই দু’টি আলাদা আলাদা এবং পরস্পর থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের মানুষ পাওয়া যায় তখন কাজের প্রতিদানের ব্যাপারটি কেমন করে অস্বীকার করা যেতে পারে ? যারা অধপতনের গভীর গর্তে নেমে গেছে এবং যারা উন্নতির উচ্চতম শিখরে পৌঁছে গেছে তাদেরকে যদি কোন প্রতিদান না দেয়া হয় এবং উভয় দলের পরিণতি একই হয়, তাহলে এর অর্থ এই দাঁড়ায় যে , আল্লাহর রাজত্বে কোন ইনসাফ নেই। অথচ শাসককে ইনসাফ অবশ্যি করতে হবে , এটা মানুষের সাধারণ জ্ঞান এবং মানবিক প্রকৃতির দাবী। এ ক্ষেত্রে আল্লাহ যিনি সকল শাসকের বড় শাসক তিনি ইনসাফ করবেন না , একথা কেমন করে কল্পনা করা যেতে পারে।
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
পরম করুণাময় অতি দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।
وَالتِّينِ وَالزَّيْتُونِ
(১) ওয়াত্তীনি ওয়ায্যাইতূনি।
(১) কসম ‘তীন ও যায়তূন’ এর।
وَطُورِسِينِينَ
(২) ওয়াতুরি সীনীনা।
(২) কসম ‘সিনাই’ পর্বতের,
وَهَذَاالْبَلَدِالْأَمِينِ
(৩) ওয়াহা-যাল্ বালাদিল্ আমীন।
(৩) কসম এই নিরাপদ নগরীর।
لَقَدْخَلَقْنَاالْإِنْسَانَفِيأَحْسَنِتَقْوِيمٍ
(৪) লাক্বদ্ খলাকনাল্ ইন্সা-না ফী আহ্সানি তাক্বওয়ীম্।
(৪) অবশ্যই আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি সর্বোত্তম গঠনে।
ثُمَّرَدَدْنَاهُأَسْفَلَسَافِلِينَ
(৫) ছুম্মা রদাদ্না-হু আস্ফালা সা-ফিলীন।
(৫) তারপর আমি তাকে ফিরিয়ে দিয়েছি হীনদের হীনতম রূপে।
إِلَّاالَّذِينَآمَنُواوَعَمِلُواالصَّالِحَاتِفَلَهُمْأَجْرٌغَيْرُمَمْنُونٍ
(৬) ইল্লাল্লাযীনা আ-মানূ ওয়া‘আমিলুছ্ ছোয়া-লিহা-তি ফালাহুম্ আজরুন্ গইরু মাম্নূন্।
(৬) তবে যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকর্ম করেছে, তাদের জন্য রয়েছে নিরবচ্ছিন্ন পুরস্কার।
فَمَايُكَذِّبُكَبَعْدُبِالدِّينِ
(৭) ফামা- ইয়ুকায্যিবুকা বা’দু বিদ্দীন্।
(৭) সুতরাং এরপরও কিসে তোমাকে কর্মফল সম্পকের্ অবিশ্বাসী করে তোলে?
أَلَيْسَاللَّهُبِأَحْكَمِالْحَاكِمِينَ
(৮) আলাইসাল্লা-হু বিআহ্কামিল্ হা-কিমীন্।
(৮) আল্লাহ কি বিচারকদের শ্রেষ্ঠ বিচারক নন?