ইসলামী রাষ্ট্র ও বিপ্লবের নৈতিক ভিত্তি: ধারনা, প্রস্তুতি ও ভুল বোঝাবুঝি

সূরা মাউন শব্দের অর্থ
সুরা মা’উন পবিত্র কুরআনের ১০৭তম সুরা। মক্কায় অবতীর্ণ এ সুরায় রয়েছে ৭ আয়াত। এই সুরাকে সুরা দ্বীন বা সুরা তাকজিবও বলা হয়। মাউন শব্দের অর্থ যাকাত অথবা গৃহস্থালী কাজে ব্যবহৃত ছোটখাটো জিনিস।
সুনানে নাসাঈতে হযরত আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেনঃ “প্রত্যেক ভাল জিনিষই সদকা। ডোল, হাঁড়ি, বালতি ইত্যাদি দেয়াকে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর আমলে আমরা মাউন নামে অভিহিত করতাম। মোটকথা, এর অর্থ হলো যাকাত না দেয়া, আনুগত্য না করা, কোন জিনিষ চাইলে না দেয়া, ছোট ছোট জিনিষ কেউ কিছু সময়ের জন্যে নিতে চাইলে না দেয়া, যেমন চালুনি, কোদাল, দা, কুড়াল, ডেকচি ডোল ইত্যাদি।
এই সুরায় কিয়ামতকে অমান্য করার, অনাথের প্রতি কঠোরতার, দরিদ্রদের আহার করাতে রাজী না হওয়ার, লোক দেখানো উপাসনার এবং নামাযে অনীহা ও অমনোযোগী হওয়ার নিন্দার বিষয় উল্লিখিত হয়েছে।
নাযিলের সময়কাল
ইবনে আব্বাস (রা) ও ইবনে যুবাইরের (রা) উক্তি উদ্ধৃত করেছেন। তাতে তাঁরা এ সূরাকে মক্কী হিসেবে গণ্য করেছেন। আতা ও জাবেরও এ একই উক্তি করেছেন। কিন্তু আবু হাইয়ান বাহরুল মুহীত গ্রন্থে ইবনে আব্বাস , কাতাদাহ ও যাহহাকের এ উক্তি উদ্ধৃত করেছেন যে , এটি মাদানী সূরা । আমাদের মতে , এই সূরার মধ্যে এমন একটি আভ্যন্তরীণ সাক্ষ রয়েছে যা এর মাদানী হবার প্রমাণ পেশ করে ।
এ সূরায় এমন সব নামাযীদেরকে ধ্বংসের বার্তা শুনানো হয়েছে যারা নিজেদের নামাযে গাফলতি করে এবং লোক দেখানো নামায পড়ে। এ ধরনের মুনাফিক মাদীনায় পাওয়া যেতো। কারণ ইসলাম ও ইসলামের অনুসারীরা সেখানে এমন পর্যায়ের শক্তি অর্জন করেছিল যার ফলে বহু লোককে পরিস্থিতির তাগিদে ঈমান আনতে হয়েছিল এবং তাদের বাধ্য হয়ে মসজিদে আসতে হতো। তারা নামাযের জামায়াতে শরীক হতো এবং লোক দেখানো নামায পড়তো । এভাবে তারা মুসলমাদের মধ্যে গণ্য হতে চাইতো । বিপরীতপক্ষে মক্কায় লোক দেখাবার জন্য নামায পড়ার মতো কোন পরিবেশই ছিল না। সেখানে তো ঈমানদারদের জন্য জামায়াতের সাথে নামায পড়ার ব্যবস্থা করা দূরূহ ছিল। গোপনে লুকিয়ে লুকিয়ে নামায পড়তে হতো। কেউ প্রকাশ্যে নামায পড়লে ভয়ানক সাহসিকাতর পরিচয় দিতো । তার প্রাণনাশের সম্ভবনা থাকতো। সেখানে যে ধরনের মুনাফিক পাওয়া যেতে তারা লোক দেখানো ঈমান আনা বা লোক দেখানো নামায পড়ার দলভুক্ত ছিল না। বরং তারা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সত্য নবী হবার ব্যাপারটি জেনে নিয়েছিল এবং মেনে নিয়েছিল। কিন্তু তাদের কেউ কেউ নিজের শাসন ক্ষমতা , প্রভাব প্রতিপত্তি ও নেতৃত্ব বহাল রাখার জন্য ইসলাম গ্রহণ করতে পিছপাও হচিছল। আবার কেউ কেউ নিজেদের চোখের সামনে মুসলমানদেরকে যেসব বিপদ – মুসিবতের মধ্যে ঘেরাও দেখছিল ইসলাম গ্রহণ করে নিজেরাও তার মধ্যে ঘেরাও হবার বিপদ কিনে নিতে প্রস্তুত ছিল না।
বিষয়বস্তু ও মূল বক্তব্য
আখেরাতের প্রতি ঈমান না আনলে মানুষের মধ্যে কোন ধরনের নৈতিকতা জন্ম নেয় তা বর্ণনা করাই এর মূল বিষয়বস্তু। ২ ও ৩ আয়াতে এমনসব কাফেরদের অবস্থা বর্ণনা করা হয়েছে যারা প্রকাশ্যে আখেরাতকে মিথ্যা বলে। আর শেষ চার আয়াতে যেসব মুনাফিক আপাতদৃষ্টিতে মুসলমান মনে হয় কিন্তু যাদের মনে আখেরাত এবং তার শাস্তি ও পুরস্কার ও পাপ পূর্ণের কোন ধারণা নেই , তাদের অবস্থা বর্ণনা করা হয়েছে। আখেরাত বিশ্বাস ছাড়া মানুষের মধ্যে একটি মজবুত শক্তিশালী ও পবিত্র – পরিচ্ছন্ন চরিত্র গড়ে তোলা কোন ক্রমেই সম্ভবপর নয় , এ সত্যটি মানুষের হৃদয়পটে অংকিত করে দেয়াই হচ্ছে সামগ্রিকভাবে উভয় ধরনের দলের কার্যধারা বর্ণনা করার মূল উদ্দেশ্য।
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ
أَرَأَيْتَ الَّذِي يُكَذِّبُ بِالدِّينِ
(১) তুমি কি তাকে দেখেছো৷ যে আখেরাতের পুরস্কার ও শাস্তিকে মিথ্যা বলছে।
فَذَٰلِكَ الَّذِي يَدُعُّ الْيَتِيمَ
(২) সে-ই তো এতিমকে ধাক্কা দেয়
وَلَا يَحُضُّ عَلَىٰ طَعَامِ الْمِسْكِينِ
(৩) এবং মিসকিনকে খাবার দিতে উদ্বুদ্ধ করে না৷
فَوَيْلٌ لِّلْمُصَلِّينَ
(৪) তারপর সেই নামাযীদের জন্য ধবংস।
الَّذِينَ هُمْ عَن صَلَاتِهِمْ سَاهُونَ
(৫) যারা নিজেদের নামাযের ব্যাপারে গাফলতি করে।
الَّذِينَ هُمْ يُرَاءُونَ
(৬) যারা লোক দেখানো কাজ করে।
وَيَمْنَعُونَ الْمَاعُونَ
(৭) এবং মামুলি প্রয়োজনের জিনিসপাতি ( লোকদেরকে ) দিতে বিরত থাকে৷