কুরআনের আইন প্রতিষ্ঠার গুরুত্ব ও আধুনিক সমাজে এর বাস্তবায়ন ভূমিকা

সুরা আল কাউসার কুরআনুল কারিমের ১০৮ নং সুরা। আয়াতের সংখ্যা ৩। পারার ক্রম ৩০ রুকুর সংখ্যা ১।
নামকরণ: كَوثَر শব্দটির উৎপত্তি كَثرَة থেকে। এর বিভিন্ন অর্থ বিদ্যমান। ইবনে কাসীর (রঃ) ‘প্রভূত কল্যাণ’ অর্থকে প্রাধান্য দিয়েছেন। কারণ এই অর্থ নেওয়াতে এমন ব্যাপকতা রয়েছে, যাতে অন্যান্য অর্থ শামিল হয়ে যায়। যেমন- হাদীসে বলা হয়েছে যে, ‘এটা একটি নহর যা বেহেশ্তে নবী (সাঃ)-কে দান করা হবে’। কোন কোন হাদীসে কাওসার বলতে ‘হওয’ বুঝানো হয়েছে। যে হওয হতে ঈমানদাররা জান্নাতে যাওয়ার পূর্বে নবী (সাঃ)-এর মুবারক হাতে পানি পান করবে। জান্নাতের ঐ নহর থেকেই পানি সেই হওযের মধ্যে আসতে থাকবে। অনুরূপ দুনিয়ার বিজয়, নবী (সাঃ)-এর মর্যাদা ও খ্যাতি, চিরস্থায়ীভাবে তাঁর সুনাম এবং আখেরাতের প্রতিদান ও বিনিময় ইত্যাদি সমস্ত জিনিসই ‘প্রভূত কল্যাণ’-এ শামিল হয়ে যায়।
(তাফসীর ইবনে কাসীর)
মুহাম্মদ ইবনে আলী ইবনে হুসাইন থেকে বর্ণিত, যে ব্যক্তির পুত্রসন্তান মারা যায়, আরবে তাকে অবতার বা নির্বংশ বলা হয়। রসূলুল্লাহ্ (সাঃ) এর পুত্র কাসেম আথবা ইবরাহীম যখন শৈশবেই মারা গেলেন, তখন কাফেররা তাকে নির্বংশ বলে উপহাস করতে লাগল।ওদের মধ্যে ‘আস ইবনে ওয়ায়েলের' নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তার সামনে রসূলুল্লাহ্ -এর কোন আলোচনা হলে সে বলতঃ আরে তার কথা বাদ দাও, সে তো কোন চিন্তারই বিষয় নয়। কারণ, সে নির্বংশ। তার মৃত্যু হয়ে গেলে তার নাম উচ্চাচরণ করারও কেউ থাকবে না। এর পরিপ্রেক্ষিতে সূরা আল কাওসার অবতীর্ণ হয়। ( ইবনে কাসির মাযহারি)
ফজিলত সুরা কাওসার মুসলিম উম্মাহর জন্যে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। এর কারণ হলো এ সূরা থেকে জান্নাতের হাউযে কাউসার এর কথা বলা হয়েছে যা আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কে প্রদান করা হবে। এ সূরার অনেক ফজিলত রয়েছে।
হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, একদিন মসজিদে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম আমাদের সামনে উপস্থিত হলেন। হঠাৎ মহানবীর (সা.) মাঝে তন্দ্রা অথবা একধরনের অচেতনতার ভাব দৃশ্যমান হলো। এরপর নবীজি (সা.) হাসিমুখে মস্তক উত্তোলন করলেন। আমরা জিজ্ঞেস করলাম, ‘ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনার হাসির কারণ কী?’ তিনি বললেন, ‘এই মুহূর্তে আমার নিকট একটি সূরা অবতীর্ণ হয়েছে’। অতঃপর তিনি বিসমিল্লাহসহ সূরা কাউসার পাঠ করলেন এবং বললেন, ‘তোমরা জান, কাউসার কী?’ আমরা বললাম, ‘আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর রাসূল ভালো জানেন'। তিনি বললেন, ‘এটা জান্নাতের একটি নহর। আমার পালনকর্তা আমাকে এটা দেবেন বলে ওয়াদা করেছেন। এতে অজস্র কল্যাণ আছে এবং এই হাউজে কেয়ামতের দিন আমার উম্মত পানি পান করতে যাবে। এর পানি পান করার পাত্র সংখ্যা আকাশের তারকাসম হবে। তখন কতক লোককে ফেরেশতাগণ হাউজ থেকে হটিয়ে দেবে। আমি বলবো, পরওয়ার-দেগার, সে তো আমার উম্মত। আল্লাহ তায়ালা বলবেন, আপনি জানেন না, আপনার পরে সে কী নতুন মত ও পথ অবলম্বন করেছিল?’ (হাদিসে সহিহ বোখারি, মুসলিম শরিফ, আবু দাউদ, নাসায়ী)
হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, “কাওসার সেই অজস্র কল্যাণ যা মহান আল্লাহ তা'আলা রাসূল (সাঃ) কে দান করেছেন। কাওসার জান্নাতের একটি প্রস্রবনের নাম।”
بسم الله الرحمن الرحيم
إِنَّآ أَعْطَيْنَٰكَ ٱلْكَوْثَرَ
ইন্নাআ‘তাইনা-কাল কাওছার।
নিশ্চয় আমি আপনাকে কাওসার দান করেছি।
فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَٱنْحَرْ
ফাসালিল লিরাব্বিকা ওয়ানহার।
অতএব আপনার পালনকর্তার উদ্দেশ্যে নামায পড়ুন এবং কোরবানী করুন।
إِنَّ شَانِئَكَ هُوَ ٱلْأَبْتَرُ
ইন্না শা-নিআকা হুওয়াল আবতার।
যে আপনার শত্রু, সেই তো লেজকাটা, নির্বংশ।