Dawatul Islam | হযরত ওমর (রা:)-এর ছেলের বিষ্ময়কর বিয়ে

বৃহস্পতিবার, ০৬, নভেম্বর, ২০২৫ , ২২ কার্তিক ১৪৩২

হযরত ওমর (রা:)-এর ছেলের বিষ্ময়কর বিয়ে
০১ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১১:০০ মিনিট

ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর (রা:) সম্পর্কে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আমার পরে কেউ যদি নবী হতো, তাহলে ওমরকে আল্লাহ সে সম্মান দিতেন। অন্য হাদিসে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কেয়ামতের দিন প্রথম যে বান্দার হিসাব ডান হাতে দেওয়া হবে সে হচ্ছে ওমর। নবীর এ কথা শুনে সাহাবিরা বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আবু বকর (রা.) সম্পর্কে তো কিছু বললেন না। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ততক্ষণে আবু বকর জান্নাতের দরজায় কড়া নাড়তে থাকবে।

হযরত ওমর (রা:)-এর প্রজ্ঞা-বুদ্ধিমত্তা এত বেশি ছিলো যে, কখনো কখনো ওমরের একক সিদ্ধান্তের আলোকে আল্লাহ তায়ালা কুরআনের আয়াত নাজিল করেছেন। হাফেজ জালালুদ্দিন সুয়ুতি (রহ.) বলেন, কুরআনের অন্তত ২১টি আয়াত আল্লাহ তায়ালা ওমরের সিদ্ধান্তের অনুকূলে নাযিল করেছেন।

মিসর বিজয়ী সেনাপতি আমর ইবনুল আস তখন মিসরের গভর্নর। তাঁর শাসনে মিসরের জনগণ বেশ শান্তিতেই কাটাচ্ছিল। কিন্তু তাঁর পুত্রের লাগামহীন চলাফেরায় গভর্নরের ন্যায়পরায়ণতার সুনাম নষ্ট হচ্ছিল। সে যখনই পথে বেরোত, নিজের চালচলন দ্বারা সবাইকে বুঝিয়ে দিত সে সাধারণ কেউ নয়, গভর্নরের ছেলে।

একদিন সে একজন মিসরীয় খ্রিস্টানের ছেলেকে প্রহার করল। গরীব খ্রিস্টান গভর্নরের কাছে তাঁর ছেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করার সাহস পেল না। তাঁর এক প্রতিবেশী মদিনা থেকে ফিরে এসে জানাল, খলিফা ওমর (রা.) অত্যন্ত ন্যায়পরায়ণ শাসক। তিনি জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সবার সমান অধিকার নিশ্চিত করেন এবং কেউ কারোর ওপর জুলুম করেছে জানলে কঠোর শাস্তি দেন। এ কথা শুনে ওই মিসরীয় খ্রিস্টান মদিনায় খলিফার কাছে গভর্নরের ছেলের বিপক্ষে অভিযোগ করলেন। হযরত ওমর (রা:) তৎক্ষণাৎ আমর ইবনুল আস এবং তাঁর ছেলেকে মদিনায় ডেকে এনে আনীত অভিযোগের বিচারে আদালত বসালেন। সাক্ষ্য-প্রমাণ দ্বারা আমর ইবনুল আসের (রা:) ছেলে দোষী প্রমাণিত হলো। খলিফা ওমর (রা:) অভিযোগকারীর ছেলেকে বললেন, সে তোমাকে যেভাবে প্রহার করেছে তুমিও সেভাবে ততখানি প্রহার কর। তারপর খলিফা বললেন, প্রজারা শাসকের দাস নয়। শাসকরা প্রজাদের সেবক। প্রজারা ঠিক তেমনি স্বাধীন যেমন তাদের মায়ের পেট থেকে ভূমিষ্ঠ হওয়ার সময় স্বাধীন।

মদীনায় তখন রাত। খলিফা ওমর (রা:) নাগরিকদের অবস্থা জানার জন্য মদিনার রাস্তায় ঘুরছিলেন। হঠাৎ এক বাড়িতে এক বৃদ্ধা ও তার কন্যার কথোপকথন শুনে দাঁড়ালেন। কান পাতলেন তিনি। বৃদ্ধা মেয়েকে বলছেন, “দুধে পানি মিশিয়ে বিক্রি করলে হয়না? তাহলে আমাদের অবস্থা আরো সচ্ছল হয়”। কন্যা তার উত্তরে বললো, “তা কি করে হয়, মা। খলিফার হুকুম, কেউ দুধে পানি মিশাতে পারবে না”। বৃদ্ধা বলল,”হোক না খলীফার আদেশ, কেউ তো আর দেখছে না”।

কন্যা প্রতিবাদ করে বলল,”না মা তা হয়না। প্রত্যেক বিশ্বাসী মুসলমানের কর্তব্য খলিফার আদেশ মেনে চলা। খলিফা না দেখতে পান, কিন্তু আল্লাহ তো দেখছেন, তার চোখে ধুলো দেবার সাধ্য কার আছে?” খলীফা ওসর (রা:) দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সব কথা শুনলেন। তারপর বাড়িতে ফিরে এলেন। তিনি ভাবতে লাগলেন, ঐ মেয়েটিকে কি পুরষ্কার দেয়া যায়। অনেক ভেবে একটা সিদ্ধান্ত নিলেন।

পরদিন দরবারে এসে খলিফা সেই অজানা মেয়েটিকে ডাকলেন। ডাক পেয়ে মা ও মেয়ে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে খলিফার দরবারে উপস্থিত হল। তারা উপস্থিত হলে খলিফা তার পুত্রদের ডাকলেন। পুত্রদের নিকট গত রাতের সমস্ত বিবরণ দিয়ে তিনি তাদের আহবান করে বললেন, “কে রাযী হবে এই কন্যাকে গ্রহণ করতে? এর চেয়ে উপযুক্ত কন্যা আমি আর খুঁজে পাইনি।” পুত্রদের একজন তৎক্ষণাৎ রাযী হলো। কন্যাও সম্মতি দিল। খলীফার ছেলের সাথে বিয়ে হয়ে গেলো মেয়েটির।

সব সংবাদ